মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে পারলে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে দেশটি।
এ জন্য সু চির সমর্থকরা জাতীয় ঐক্য সরকার (এনজেইউ) গঠন করে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে পাঁচ দফার নীতি-কৌশল প্রকাশ করেছেন।
একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে সু চি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয়া জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দেশটিতে বসন্ত বিপ্লব আনতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা তিন পাতার এক নীতি-কৌশলে সু চি সরকারের আমলে জাতিগত নিধন ও নিপীড়নের শিকার দেশটির রাখাইন রাজ্যচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পাঁচটি অঙ্গীকার করা হয়েছে। এগুলো হলো:
১. রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নিপীড়নের বিচার হবে
২. সু চি-সমর্থিত গণতন্ত্রপন্থিরা ক্ষমতায় ফিরলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে
৩. দেশটির নাগরিকত্ব আইন বদলাবে
৪. নতুন নাগরিকত্ব আইনে প্রায় সব রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকারের উপযুক্ত হবে।
৫. নতুন সংবিধান তৈরিতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে জাতীয় ঐক্যের ওই সরকার
মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের দেয়া বিবৃতিতে এনইউজি রোহিঙ্গাদের জান্তা সরকার উৎখাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ‘আমরা সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বসন্ত বিপ্লবে অংশ নিতে আমাদের ও অন্যদের সঙ্গে হাত মেলাতে রোহিঙ্গাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
তিন পৃষ্ঠার ওই বিবৃতিতে এনইউজি মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়) বাতিল করে মিয়ানমারে জন্ম নেয়া সবাইকে বা মিয়ানমারের নাগরিকদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদানের অঙ্গীকার করেছে।
গ্রুপটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের শিবিরগুলোতে বিপর্যস্ত সব রোহিঙ্গাকে ‘স্বদেশে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে’ তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশটির গণমাধ্যম মিয়ানমার নাউ শুক্রবার জানায়, ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত (ছায়া) সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য চাপে ছিল।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিন যত গড়াচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হচ্ছে দেশটির জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার।
গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী সেনা সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে আন্দোলন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি দেশটির রাজনীতিবিদসহ বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ওই জাতীয় ঐক্য সরকার। এর মধ্যে অন্যতম হিসেবে নেতৃত্বে রয়েছেন সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডির সদস্যরা। তারা নিজেদের মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে দাবি করছেন।
একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এনইউজেকে এরই মধ্যে সন্ত্রাসী দল অ্যাখ্যা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার।
এমনকি এই দলের সঙ্গে কেউ প্রকাশ্যে অথবা গোপনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
তবে সবকিছু উপেক্ষা করে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে এনইউজে। তৈরি হয়েছে নিজেদের সেনাবাহিনী।
১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ঘোষণা করে এনইউজে রোহিঙ্গাদের তাদের বিপ্লবী সরকারে যোগ দিতে বলেছে। কারণ হিসেবে তারা আইনটিকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এনইউজি সরকার বলছে, আইনটি সংশোধন করে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে জন্ম নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের সন্তানকে পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে।
বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিলেও এ নিয়ে গড়িমসি করে চলেছে দেশটি।